1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

সততা ছাড়া সফলতা !

তিনি ছিলেন আমেরিকার সেরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন। যিনি তার ছোট ব্যবসাকে জাতীয় ব্যবসায় রূপান্তর করেছিলেন। সে সময়টাতে তার কোম্পানি হয়েছিল আমেরিকার সবচেয়ে পরিচিত নাম এবং তার নেতৃত্বে ওয়ালস্ট্রিটে সবচেয়ে বড় তারকা কোম্পানিতে পরিণত হয়েছিল। তিনি হয়েছিলেন সেসময়ে আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী সিইও।

সারা আমেরিকা জুড়ে তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ছিল। ২০০১ সালে (ফেব্রুয়ারি) তার কোম্পানি সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত কোম্পানি হিসেবে ফরচুন ম্যাগাজিনে এক নম্বর স্থানটি দখল করে। যেখানে নতুনত্ব ও ব্যবস্থাপনার মানেও তার কোম্পানি প্রথম। টানা ছয় বছর ফরচুন ম্যাগাজিনের তালিকায় তার কোম্পানি সবচেয়ে উদ্ভাবনশীল কোম্পানি হিসেবে ছিল। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বন্ধু হন এবং বিশ্ব নেতাদের উপদেষ্টাতে পরিণত হন।

এই লোকটির ছোটবেলার জীবন ছিল খুবই কষ্টের। দারিদ্র্যতার সঙ্গে সংগ্রাম করে বড় হতে হয়েছে। পরিবারের খরচ জোগান দিতে তার বাবাকে একাধিক কাজ করতে হতো তবুও বাসার খাবার পানির জোগান দেওয়াও কষ্টকর হতো। তাই ছোটবেলায়ই তাকে কাজে যোগ দিতে হয়েছে যাতে পরিবারকে সাহায্য করতে পারেন। এহেন কষ্টের মাঝে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি একজন অধ্যাপকের নজর কাড়েন যিনি তাকে মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য অর্থ পেতে ব্যবস্থা করে দেন। এরপর তিনি আমেরিকার আর্মিতে চার বছর কাজ করেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতি তৈরি শিক্ষায় যুক্ত হন। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন।

তিনি পিএইচডিতে ভর্তি হন ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার শিক্ষা, অভিজ্ঞতাসহ যখন ব্যবসায়িক জগতে প্রবেশ করলেন রাতারাতি তিনি সফলতা কুড়াতে লাগলেন। এমনকি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি শিল্পের বড় নেতাতে পরিণত হলেন। লোকে তাকে বীর বলতে লাগল এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিগণিত হতে লাগলেন। তিনি একাধিক দাতা সংস্থার অন্যতম প্রধান দাতা ছিলেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কলারশিপের জোগানদাতা ছিলেন, এমনকি রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের অর্থের জোগানদাতা হিসেবেও তিনি অন্যতম ছিলেন।

তার কোম্পানিটি ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কাজের সবচেয়ে ভালো জায়গা হিসেবে র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ছিল। তার কোম্পানিতে কাজ করা ড্রিম জব হিসেবে বিবেচিত হতো। তার নেতৃত্বের গুণাবলি খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, এমনকি ব্যবসায়িক বইগুলোতেও স্থান করে নেয়।

এমন সফলতার পরও কি ব্যর্থ হওয়া সম্ভব?
উত্তর হলো, হ্যাঁ! এতক্ষণ যাকে নিয়ে গল্প বলছিলাম তার নাম হলো কেন (কেনিথ) লেই, যিনি সেসময়ে আমেরিকার অন্যতম প্রধান কোম্পানি এনরনের প্রধান ও সিইও ছিলেন। আর এই কোম্পানিটিই সেসময়ের আমেরিকার সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত হয়। কোম্পানির প্রেসিডেন্ট জেফ্রি স্কেলিং ও সিএফও অ্যান্ডরু ফাস্টটো ব্যর্থ বিনিয়োগ খাতে হিসাবের সমস্যা ও অনৈতিক আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোম্পানির কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ গোপন করেন।

এই ঘটনা যখন তার গোচরে আসে তখন তার সামনে দুটি পথ খোলা ছিল। প্রথমটি হলো, তিনি সরকার ও পরিচালক বোর্ডে এই ভুল স্বীকার করে প্রতিকার ব্যবস্থা জানাবেন। দ্বিতীয়টি হলো, তিনি এই ভুলকে গোপন করে ভিন্ন পথে হাঁটবেন। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি দ্বিতীয় পন্থাটি গ্রহণ করলেন যার মাধ্যমে তিনি শুধু জেফ্রি স্কেলিং ও অ্যান্ডরু ফাস্টটোর এই বিশাল অনৈতিক কর্মকেই অনুমোদন দিলেন না বরং এনরন পরিচালক বোর্ডকে ভুল পথে পরিচালিত করলেন। যার ফল হলো স্বাভাবিক, কোম্পানিটির শেয়ার মালিকেরা ৪০ বিলিয়ন ডলারের মামলা করেন। পরিশেষে কোম্পানিটি দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়।

ফলে লেই-এর নেতৃত্ব মিথ্যা আর ঘৃণায় নাকাল হয় এবং এনরন কেলেঙ্কারি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। তিনি মিথ্যা ও প্রতারণায় অভিযুক্ত হন। এরপর ২০০৬ সালে তিনি হৃৎ​ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর কয়েক মাস পর আদালতের রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। স্বচ্ছতা, সততা, কঠোর পরিশ্রম নেতৃত্বেরই গুণাবলি। এ সবকিছুর সমন্বয়ে আসে সফলতা। এর কোনো একটির অভাব হলে সফলতা হয়ে যায় বিবর্ণ ও ধূসর।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ডটকম।

More News Of This Category