সঞ্চয়পত্রের সুদহার ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় বেড়েই চলেছে এর বেচাকেনা। সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় আহরণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আকারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হলেও এখন তা চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের দখলে।চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় আট হাজার ২২৯ কোটি টাকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাস শেষে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে সুদ দিয়েছে গড়ে ৬.০৬ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে গড়ে ৪.২৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে ৫ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১.৫২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।
৫ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৭৬ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.২৮ শতাংশ। ৩ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.০৪। ৩ বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বর্তমানে ১১.২৮ শতাংশ। ফলে হিসাবি ও ঝামেলামুক্ত মানুষেরা ব্যাংক থেকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ভাঙিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনছেন বলে জানা গেছে।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে ব্যাংকে আমানত রেখে যে সুদ পাওয়া যাচ্ছে তার দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে। অন্যদিকে শেয়ারবাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও খারাপ অবস্থা। এ কারণেই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন আমানতকারীরা। স্বল্প আয়ের মানুষ ও পেনশনভোগীদের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করার কথা থাকলেও বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কিনছেন বিত্তবানরাই।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) আট হাজার ২২৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার। আলোচ্য সময়ে মুনাফা বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১২ মাসে মোট ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। আর শুধু মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। তথ্যসূত্র: অর্থসূচক।