1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

বাড়ি তৈরীতে ভালো রডের বিকল্প নেই!

বাংলাদেশ এখন রড তৈরিতে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ। ভবন নির্মাণে দেশীয় এই রড ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবনের কাঠামো তৈরি হয় রড দিয়ে। এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভবন তৈরিতে রড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফাঁকি দিলে পস্তানো ছাড়া উপায় নেই। ভবন তৈরিতে নিম্নমানের রড ব্যবহার করলে তাতে ঝুঁকি বেশি।

অ্যাসুরেন্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের রাইসা প্রকল্পের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জায়েদ সুমন বলেন, ‘ভবন তৈরিতে খরচের কথা ভেবে অনেকেই রড কম দেওয়ার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু ভালো রড ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ভালো রড ব্যবহার করলে ভবনের ঝুঁকির পরিমাণ কমে যায়। বাজারে এখন ৩ মিলিমিটার থেকে শুরু করে ৪, ৫, ৮, ১০, ২০ ও ২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন রড পাওয়া যায়। তবে ভবন তৈরিতে সাধারণত তিন ধরনের রডের ব্যবহার দেখা যায়। পাইলিং, স্ল্যাব, বিম বা কলাম তৈরিতে একেক ধরনের রড ব্যবহার করা হয়। তবে যে রড কংক্রিটের সঙ্গে ভালো বন্ধন তৈরি করতে পারে, সেই রড ভালো।

বাজারে ৪০ গ্রেড, ৬০ গ্রেড ও ৭৫ গ্রেড পর্যন্ত রড পাওয়া যায়। ৪০ গ্রেডের রড এখন খুব কম ব্যবহৃত হয়। ভবন তৈরিতে সাধারণত ৬০ গ্রেডের রডই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। ৭৫ গ্রেডের রড হচ্ছে এক্সট্রিম গ্রেড। বহুতল ভবন তৈরিতে এই গ্রেডের রডের ব্যবহার বেশি। রড সাধারণ মাইল্ড স্টিল (এমএস) ও এসএস (স্টেইনলেস স্টিল) এ দুই ধরনের হয়। ভালো রড চেনার উপায় হচ্ছে তাতে মরিচা ধরবে না বা তাতে কোনো ফাটা থাকবে না। রডে বাড়ি দিলে তা থেকে ঝুরঝুর করে লোহা পড়বে না। সাধারণত এসএস রডে চুম্বক ধরে না। এ ধরনের রডগুলো ভালো। প্লেইন রডের চেয়ে ডিফর্ম বা খাঁজ কাটা রডগুলো ভালোভাবে কংক্রিটের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করতে পারে বলে সেই রড ব্যবহার করা উচিত।’

বাংলাদেশে এখন বড় বড় ভবন, অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। এসব অবকাঠামোর অধিকাংশ তৈরিতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি রড ও স্টিল ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে পরিচিত রড নির্মাতা হিসেবে সুনাম রয়েছে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম), কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম), রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের (আরএসআরএম)। এ ছাড়া আনোয়ার ইস্পাত, রহিম স্টিল মিলস, সীমা, বসুন্ধরা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান রড তৈরি করছে। এই শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে স্টিলের বার্ষিক চাহিদা ৩০ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে দেশে চার শর বেশি কারখানায় তৈরি হচ্ছে রড। এর মধ্যে ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রড তৈরি করে থাকে।

আরএসআরএমের ব্যবস্থাপক শফিকুল হক বলেন, এখন ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি। নিম্নমানের রড ব্যবহার করে ভবন তৈরি করলে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। রডের মান নিশ্চিত হয়ে তবে রড কেনা জরুরি। ভবন তৈরিতে রড, সিমেন্টের মতো মূল উপাদানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রড-সিমেন্টকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভালো মানের রড বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচায়।
বিএসআরএমের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘কোনো ভবনের মূল কাঠামোই হচ্ছে রড। ভালো রড কিনলে বাড়ি দীর্ঘস্থায়ী হবে; ঝুঁকি কমে যাবে। আমরা মানসম্মত রড কিনতে পরামর্শ দেব।’ তিনি বলেন, বিএসআরএম দৈনিক দুই হাজার টনের বেশি রড উৎপাদন করে, যা শিগগিরই চার হাজার টনে চলে যাবে। প্রতিটি জেলায় এমনকি উপজেলাতেও ডিস্ট্রিবিউটর চ্যানেল আছে যাতে সহজেই ক্রেতারা এই ব্র্যান্ডের রড কিনতে পারেন।

তপন সেনগুপ্ত আরও বলেন, ‘আমরা উন্নত রড ব্যবহারের জন্য সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছি। দেশ উন্নত হচ্ছে। বাংলাদেশে রড নির্মাতাও বাড়ছে। প্রতিযোগিতা বাড়ছে বলে এই শিল্পটিও উন্নত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আমরাই। রডের মান নিয়ে আমরা কখনো আপস করি না।’

কেএসআরএমের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মো. আশফাক উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্লোগান শেকড় থেকে শিখরে। অর্থাৎ, মাটির গভীর থেকে অনেক উঁচুতে ভবন নিয়ে যাই আমরা। ভবন তৈরিতে কেএসআরএম বিশ্বস্ততার প্রতীক। আমরা রড তৈরিতে সব সময় মান বজায় রাখি। মানের ক্ষেত্রে আপস করি না। কারণ, ভবন তৈরিতে খারাপ মানের রড ব্যবহারে বিপদের ঝুঁকি বাড়ে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আমরা রড নির্মাণ করি।’

আশফাক আরও বলেন, ‘ভবন তৈরিতে কংক্রিট ও রডের বন্ধন ঠিক হওয়া জরুরি। কংক্রিট বেইমানি করলেও রড কিন্তু বেইমানি করে না। কারণ কংক্রিটে ভেজাল দেওয়া গেলেও, রডের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। রড অবশ্যই ভালো মানের হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে রড ও কংক্রিটের রেশিওর বিষয়টিকে ঠিকমতো মানা হয় না বলে ভবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।

More News Of This Category