1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

বাড়ছে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি!

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপপরিচালক হুমায়ন কবির। তিনি আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি নামের প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন মর্মে একটি সনদ ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। পিএইচডি সনদের ভিত্তিতে দুটি ইনক্রিমেন্ট লাভ করেন তিনি।

পরে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) এক তদন্তে তার সনদ অবৈধ প্রমাণিত হয়। তদন্ত কমিটি তার পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল, ইনক্রিমেন্ট বাবদ প্রদত্ত অর্থ ফেরত এবং নৈতিক স্খলনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয়। তবে ডিগ্রি বাতিল হলেও এখনো স্বপদে বহাল আছেন ওই কর্মকর্তা।

একই প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া পিএইচডি ডিগ্রি কর্মস্থলে জমা দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। এ কর্মকর্তার ডিগ্রিও অবৈধ বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে ইউজিসি। হুমায়ন কবির ও আতিকুর রহমানের মতো অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সনদ দিয়ে চাকরিতে সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, দেশের আইন অনুসারে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার এখতিয়ার বা সুযোগ নেই। এমনকি কোনো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টার খোলারও অনুমোদন দেয়া হয়নি। যদিও নামে-বেনামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টার খুলে দেদার বিক্রি হচ্ছে পিএইচডি সনদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি সনদের গ্রাহকদের বড় অংশই সরকারি কর্মকর্তা। ভুয়া ও মানহীন সনদ নিয়ে চাকরি ও পদায়নে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিচ্ছেন তারা। আর এসব সনদ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিষয়ের একজন শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তার জ্ঞানের গভীরতা ও দক্ষতা প্রকাশ পায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে ভুয়া ও মানহীন পিএইচডি ডিগ্রি মহামারী আকার ধারণ করেছে। যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন সময় ইউজিসিতে সনদ পাঠানো হয়। বড় বড় পদে কর্মরত আছেন, এমন ব্যক্তিও অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধ ডিগ্রি নিচ্ছেন, যা আমাদের ব্যথিত করে। এটি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ প্রয়োজন।

ভুয়া ও মানহীন পিএইচডি দেয়ায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ইউজিসি। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ইউনিভার্সিটি (আইসিইউ), মালয়েশিয়ার পার্দানা ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব হনুলুলু, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি মেলবোর্ন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল), দ্য সেন্ট্রাল বোর্ড অব হায়ার এডুকেশন (সিবিএইচই), ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি।

এদিকে ভুয়া সনদ বন্ধে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি ডিগ্রির বৈধতা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে একটি প্রতিষ্ঠানকে অননুমোদিত আখ্যা দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া পিএইচডি ডিগ্রিকে অবৈধ ঘোষণা করে মন্ত্রণালয়। তবে এর তিন বছরের মাথায় একই ডিগ্রির বৈধতা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি অবৈধ বলে সিদ্ধান্ত দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘অ্যামেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃক মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের কোনো এখতিয়ার নেই।’ যদিও চলতি বছরের মে মাসে ইউজিসির কোনো মতামত ছাড়াই ২০১৫ সালে দেয়া চিঠি প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। এবারের চিঠিতে বলা হয়, ‘পিএইচডি ডিগ্রি-সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সার্বিক দিক বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদিত নয়-সংক্রান্ত গত ০১.০৪.২০১৫ তারিখের পত্রটি প্রত্যাহার করা হলো।’

ইউজিসি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা নামধারী অবৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ নেই। যদিও ইউজিসির মতামত ছাড়াই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মালা খানের সনদের বৈধতা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর ফলে ভুয়া সনদ ব্যবসায়ী ও জালিয়াত চক্র এ স্বীকৃতি ব্যবহার করে অবৈধ সনদের বাণিজ্য করবে।

ইউজিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ভুয়া ও মানহীন পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে বেতন-ভাতা ও পদায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। আবার ডিগ্রির বৈধতা ও অবৈধতা দেয়ার ক্ষমতাও তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাই মালা খানের পিএইচডি সনদের বৈধতাকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে অনেকেই ফায়দা নেবেন। তথ্যসূত্র: বনিকবার্তা।

More News Of This Category