1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

বাসের ২০ ও ট্রাকের ২৫ বছর আয়ুষ্কাল নির্ধারণ!

বাংলাদেশের রাস্তায় ২০ বছরের অধিক পুরনো বাস, মিনিবাস জাতীয় যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। একইভাবে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ সমজাতীয় পণ্যবাহী যানবাহনের সর্বোচ্চ বয়স হবে ২৫ বছর। দুর্ঘটনা হ্রাস ও পরিবেশ দূষণ রোধে যানবাহনের এ আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, যা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে বুয়েটসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ পুরনো লক্কড়-ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন যানবাহন। শুধু দুর্ঘটনা নয়, পরিবেশ দূষণেও সমান দায়ী এসব যান।

ইউএসএআইডির তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বছরে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয়, তার ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ উৎপাদন করে পরিবহন খাত।

তবে সরকার নির্ধারিত এ আয়ুষ্কাল আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সাধারণত বড় বাসের ক্ষেত্রে গড় আয়ু ধরা হয় সর্বোচ্চ ১২ বছর। ছোট বাসের ক্ষেত্রে তা ৭-১০ বছর। পরিবহন কোম্পানিগুলোও বাসের গড় আয়ু সর্বোচ্চ ১২ বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।

সুইডিশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভলভোর একটি বড় বাসের গড় আয়ু ১২ বছর, যা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ মাইল পর্যন্ত চলতে পারে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বড় ট্রাকের গড় আয়ু সর্বোচ্চ ১২ বছর। মাঝারি ও ছোট ট্রাকের গড় আয়ু ৭-১০ বছর। অথচ আমাদের দেশে যানবাহনের আয়ু নির্ধারণ করা হচ্ছে ২০-২৫ বছর। এ সিদ্ধান্তের ফলে একদিকে যেমন আমাদের পরিবেশের ক্ষতি হবে, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনাও বাড়িয়ে দেবে।

এ বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে যেসব গাড়ি আমদানি করা হয়, সেগুলোর একটা বড় অংশ পুরনো। উন্নত দেশে যখন কোনো গাড়ি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, তখনই তারা সেসব গাড়ি আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় পাঠিয়ে দেয়। ফলে যানবাহনের বয়সসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত একটি গাড়ির (বাস বা ট্রাক) আয়ুষ্কাল ১০-১২ বছরের মধ্যেই থাকে। এ অবস্থায় বাসের ২০ বছর ও ট্রাকের বয়সসীমা ২৫ বছর আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় অনেক বেশি। এতে একদিকে যেমন এসব গাড়ি আমাদের পরিবেশ দূষণ করছে, তেমনি হয়ে উঠছে দুর্ঘটনার কারণও। পুরনো ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন নিরুৎসাহিত করার জন্য বিআরটিএ ৫-৭ বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর অধিক হারে ফিটনেস ফি আদায় করতে পারে বলে মত দেন তিনি, যা এরপর থেকে প্রতি বছরই বৃদ্ধি করা হবে।

পুরনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের কারণে প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকেই। যশোরের বাণীনগরে গত বছরের মে মাসে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে খাদে পড়ে যায় একটি বাস। নিহত হন ছয় যাত্রী। দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পুরনো হয়ে যাওয়া রূপসা পরিবহনের ওই বাসটির (যশোর-ব-১১-০০৮৪) ফিটনেস সনদ ছিল না।

একই বছরের জুনে রংপুরে সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক উল্টে নিহত হন ১৭ জন। এ ট্রাকটিরও কোনো ফিটনেস সনদ পায়নি তদন্ত কমিটি। শুধু এ দুটি বাস নয়, সারা দেশে এ রকম হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে যেগুলোর কোনো ফিটনেস সনদ নেই। বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত ট্রাক, কার্গো ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৯২ হাজার বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের বয়স ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি।

১৯৮৩ সালের মোটরযান আইন অনুযায়ী চাকা, ইঞ্জিনক্ষমতা ও ধরন বিবেচনায় নিয়ে ৪০ ধরনের যানের নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। সংস্থাটির হিসাব বলছে, সারা দেশে নিবন্ধিত বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৭৪ হাজার। এর ৫৩ হাজারের বয়স ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি। দেশে ২০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের বাসের সংখ্যা কত, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি বিআরটিএর কর্মকর্তারা। তবে তারা ধারণা দিয়েছেন, সংখ্যাটি ১৮-২০ হাজারের মধ্যে হতে পারে, যেগুলোর বেশির ভাগই এখনো চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন তারা।

যানবাহনের নতুন আয়ুষ্কাল নির্ধারণ সড়কে দুর্ঘটনা রোধ করবে বলে দাবি করেছেন বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) মাহবুব-ই-রব্বানি। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন, পুরনো, জরাজীর্ণ যানবাহন চলাচল ঠেকাতে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বয়সসীমা নির্ধারণে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি খাতটির সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

নির্ধারিত বয়সসীমা অতিক্রান্ত হলে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে— এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কোনো বাস বা ট্রাকের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেলে তা ডাম্পিং করা হবে। ঢাকায় ২০ বছরের পুরনো বাসের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযানে নামে বিআরটিএ। তবে অভিযান সত্ত্বেও থেমে নেই পুরনো বাসের চলাচল। বিআরটিএর পাশাপাশি পুরনো বাস চলাচল রোধে উদ্যোগী হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় ২০ বছরের পুরনো বাস চলতে পারবে না। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে আমরা এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছি। তথ্যসূত্র: বনিক বার্তা।

More News Of This Category