1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

ফুটবল আইকন থেকে এনভয় গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা!

সত্তর থেকে আশির দশকের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ১৯৮২ সালে ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনের রেকর্ড ভেঙে ঢাকা লিগে তিনি করেন ২৭টি গোল। সে সময় তিনি ছিলেন মোহামেডানের খেলোয়াড়। ওই বছরই সালাম মুর্শেদী ভারতে আশিস জব্বার টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ ১০ গোল করে ঢাকা মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করেন। দেশের ও বিদেশের মাটিতে ওই দুটোই সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।

সালাম মুর্শেদী সফল ব্যবসায়ী। রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও পোশাকখাতে অগ্রগণ্য এক ব্যক্তিত্ব তিনি। দেশের পোশাকখাতের সর্বোচ্চ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এক্সপোর্টার অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইএবির প্রেসিডেন্ট পদে আছেন । বস্ত্র ও পোশাকখাত ছাড়াও রকমারি ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারক হিসেবে রাষ্ট্রের শীর্ষ পদক ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন- বাফুফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করছেন। মানুষের বেশি ভালোবাসা পেয়ে চলেছেন ফুটবলের কারণেই। সালাম মুশের্দী বলেন,“এখনো সবাই আসলে ফুটবলার সালামই বলেন”

সালাম মুর্শেদীর জন্ম ১৯৬০ সালে খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটি গ্রামে। বাল্যকাল এবং বেড়ে ওঠা খুলনা শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরের এই গ্রামেই। শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি নৈহাটি হাইস্কুলে। এ স্কুল থেকেই ১৯৭৬ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৮ সালে খুলনা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তবে লেখাপড়ার মাঝপথেই খেলাধুলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।‘আমার জীবনে একদিনে সব আসেনি। একটু একটু করে সব বদলেছে।

খুলনায় ফুটবলের হাতেখড়ি। প্রথম ঢাকায় আসি ১৯৭৬ সালে। আজাদ স্পোর্টিংয়ে খেলার সময়েই ১৯৭৭ সালে আমি জাতীয় যুবদলে সুযোগ পাই। এরপর ১৯৭৮ সালে আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামি। কাজী সালাউদ্দিনের রেকর্ড ভেঙ্গে ১৯৮২ সালে লীগে করেন ২৭ গোল, যে রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙ্গতে পারেনি।খেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেও।

১৯৮০ সালে মোহামেডানে আসি এবং ১৯৮৭ সালে খেলা ছাড়া পর্যন্ত এ ক্লাবেই খেলি। আমি অনেক দিন মোহামেডানকে নেতৃত্ব দিয়েছি। জাতীয় লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ২৭ গোলের রেকর্ড-সেটি এখনও আমার দখলে। ২৪টি গোল করে এ রেকর্ড ছিল বর্তমান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের দখলে। আমি ২৭ গোল করে সে রেকর্ড ভেঙে দিই ১৯৮২ সালে। “১৯৮৭ সালে খেলা ছেড়ে দিই। কারণ এ সময় থেকে আমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। “

একজন ফুটবলার থেকে সফল ব্যবসায়ী সালাম মুর্শেদী গড়ার পেছনের কারিগর দু’জন। এদের একজন হচ্ছেন (যিনি আমার বড় ভাইয়ের মতো) দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কুতুবউদ্দিন আহমেদ এবং আমার স্ত্রী শারমিন সালাম। সেই সঙ্গে রয়েছে আমার বাবা-মায়ের দোয়া ও অনুপ্রেরণা। এনভয় গ্রুপের যাত্রা শুরু ১৯৮৪ সালে হলেও পরের বছর ১৯৮৫ সালে রাজধানীর ৪০০/বি খিলগাঁওয়ে ‘এনভয়’ গার্মেন্ট নামে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করি।

নভয় গ্রুপের কেবল গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিই রয়েছে মোট ১৫টি। এই কারখানাগুলো হচ্ছে এনভয় গার্মেন্টস লিমিটেড, এস্ট্রাস গার্মেন্টস, ইপোচ গার্মেন্টস, আরমোয়ার গার্মেন্টস, পাস্তেল অ্যাপারেলস, মানতা অ্যাপারেলস, এনভয় ডিজাইন, নাদিয়া গার্মেন্টস, রিগাল গার্মেন্টস, সুপ্রিম অ্যাপারেলস, ডর্নিক অ্যাপারেলস, ফন্টিনা ফ্যাশন, এনভয় ফ্যাশন এবং ওলিও অ্যাপারেলস। এসব কারখানা থেকে বিশ্বের নামিদামি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পোশাক কিনে থাকে। বড় বড় কয়েকটি বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ওয়ালমার্ট, জারা, রিগাটা, ওকায়দি, নেক্সট, এমঅ্যান্ডএস প্রভৃতি।

এনভয় টেক্সটাইল মিল গড়ে তোলা হয়েছে ৪৮ একর জায়গার ওপর, যেটি বাংলাদেশের প্রথম রোপ ডায়িং প্ল্যান্ট। এ কারখানার ডেনিম ব্র্যান্ডের কাপড় ইউরোপ, তুরস্ক, ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় রফতানি করা হয়। ২০০১ সালে পোশাক শিল্পের বাইরে গড়ে তোলা হয় আইটি কনসালটেন্ট সেন্টার। এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ডের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে। ন্যাশনাল সিস্টেম সলিউশন নামের প্রযুক্তি খাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে এনভয় গ্রুপ। এই গ্রুপের আরেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান শেলটেক।

১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আবাসন খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছে। প্লাটিনাম স্যুইট নামের এই শিল্প গ্রুপের রয়েছে হোটেল ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে ২০০৯ সালে। ট্রেডিং ডিভিশনে রয়েছে লুনার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং ইমারেল্ড ট্রেডিং লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালে গড়ে তোলা হয় পিনাতা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এবং ওআইএ গ্লোবাল লজিস্টিক্স (বিডি) লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান দুটি। এই গ্রুপেরই আরেক শীর্ষ প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড। যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে ৩০টি ব্রাঞ্চ রয়েছে।

সালাম মুর্শেদী বলেন, আমি যখন বিজনেস করি তখন অনেক সমালোচনা শুনেছি। আমার ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক সমালোচনা করেছে। আমার শুভাকাঙ্খীরাও বলেছে, আপনি অনেক ঝুঁকি নিচ্ছেন। আমি বলেছি, “ঝুঁকি না নিলে তো মানুষ কখনো সফল হতে পারে না।” সালাম মুর্শেদীর প্রিয় ফুটবলার মেসি, ম্যারাডোনা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থাকলে রাত জেগে খেলা দেখেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দলের খেলা তাঁর ভালো লাগে।সালাম মুর্শেদীর পোশাক স্ত্রীই পছন্দ করে কিনে দেন। টি-শার্ট, প্যান্ট প্রিয় তাঁর।

খেলোয়াড়ি জীবনটা মিস করলেও এখনকার ব্যস্ততাও তাঁর ভালো লাগে। এত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পেরেছেন। প্রায় ২০ হাজার কর্মী আছেন তাঁদের প্রতিষ্ঠানে। সালাম মুর্শেদীর মতে,‘কাজ ছাড়া থাকতে পারি না। কাজ না থাকলে কী হবে, ভাবতে পারি না। কাজই আমার জীবন।’

তথ্যসূত্র: দি প্রোফাইলস ডট ইনফো সালাম মুর্শেদী।

More News Of This Category