1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

দুবাইয়ের আল আভির বাজারে ৭৫% ব্যবসা বাংলাদেশীদের!

শুরু করেছিলেন শূন্য হাতে। প্রথমে শ্রমিক, এরপর খুচরা বিক্রেতা। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে স্বপ্ন। একসময় সাহস করে নিজের সঞ্চয় ও ঋণের টাকায় মিলিয়ে করেন বড় বিনিয়োগ। আর তাতেই বাজিমাত। তিনি জালাল উদ্দিন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের তথা মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ পর্যায়ের ফল ও সবজির বাজার আল আভিরের নামী ব্যবসায়ী তিনি।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন ৪১ বছরে দুবাইয়ে গড়ে তুলেছেন পাইকারি ফল ও সবজি বিক্রির তিনটি বড় প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো মোহাম্মদ জালাল ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রুট ট্রেডিং, আতিনা এমিরেটস জেনারেল ট্রেডিং ও বনফুল ফুডস্টাফ ট্রেডিং। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ টন সবজি ও ফল বিক্রি হয়।

তিনি মূলত বিক্রি করেন টমেটো, শসা ও নানা জাতের ফল। তাঁর এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৭০ জন বাংলাদেশি। আল আভিতে ফল ও সবজি বাজারের বড় পাঁচজন ব্যবসায়ীর নামের তালিকা করলে ওপরের দিকেই থাকবে জালাল উদ্দিনের নাম। পাইকারি বিক্রির পাশাপাশি তিনি আমদানিও করেন।

জালালের পাশাপাশি বাংলাদেশি কমপক্ষে ১৫০ জন পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছেন এ বাজারে। প্রতিদিন তাঁরা লেনদেন করেন প্রায় চার কোটি দিরহাম। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৯২ কোটি টাকা। বাংলাদেশিদের বাইরে এ বাজারে অন্যান্য দেশের পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছেন ৫০ জনের মতো। এ হিসাব সেখানকার ব্যবসায়ীদের। এ–সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব আমিরাতের সরকারি দপ্তরের কোথাও পাওয়া যায়নি।

দুবাইয়ের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আল আভির বাজার কমপক্ষে ৬০–৭০ বছরের পুরোনো। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে প্রবাসীরা সেখানে যেতে শুরু করে। শুরুর দিকে সেখানে যাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে অন্যতম জালাল উদ্দিন। তিনি সবার কাছে মদিনা নামে পরিচিত।

তিনি এ বাজারে ব্যবসা শুরু করেন ১৯৭৭ সালে। তখন হাতে গোনা কয়েকজন বাংলাদেশি সেখানে ব্যবসা করতেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে এসে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি এখন নিজেরাই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরাও নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে আসছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এবং শ্রমিক মিলে এই মার্কেটে বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। অন্যান্য দেশের নাগরিক রয়েছেন আরও ৩ হাজারের মতো। বাংলাদেশিদের মধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা প্রায় ৭ হাজার। বলা যায়, মার্কেটের মূল চালিকাশক্তি বাংলাদেশিরা।

কথা হয় বাজারটির আরেক পাইকারি বিক্রেতা চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা রবিউল হোসেনের সঙ্গে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েল ফুড ট্রেডিং। তিনি বলেন, আমিরাতে সব প্রদেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ—বাহরাইন, ওমান, সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতে এ বিপণিকেন্দ্র থেকে ফল ও সবজি যায়।

এ ছাড়া সড়কপথে ফল ও সবজি আসে ইরান, লেবানন, জর্ডান ও মিসর থেকে। আর আকাশপথে আসে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, চিলি, পেরু, আর্জেন্টিনা ও তুরস্ক থেকে। তবে আমদানি–রপ্তানিকারকদের মধ্যে বেশির ভাগ অন্য দেশের ব্যবসায়ী। এর মধ্যে বাংলাদেশি আছেন ৩০ শতাংশ।

আল আভিরের ব্যস্ততা: ৪ অক্টোবর দুবাইয়ের আলমুতিনা থেকে যাত্রা শুরু করে ২৫ কিলোমিটার দূরের আভিয়ার পৌঁছাতে সময় লাগে ২৫ মিনিটের মতো। সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, বড় শেডের নিচে প্যাকেটভর্তি ফল ও সবজি নিয়ে ব্যস্ততা বিক্রেতাদের। ট্রলিভর্তি ফল ও সবজির প্যাকেট ঢুকছে।

শেডে সারি করে রাখতেই বিক্রেতারা শুরু করছেন দরদাম। দরদামে বনিবনা হলেই এসব পণ্য শ্রমিকেরা তুলে দিচ্ছেন কাভার্ড ভ্যান কিংবা ছোট-বড় ট্রাকে। ব্যবসায়ীদের আবার আক্ষেপও রয়েছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী বলেন, আমিরাতে ভিসা জটিলতার কারণে অনেককে এখান থেকে চলে যেতে হয়েছে।

ভিসাপদ্ধতি সহজ হলে আরও বাংলাদেশি এখানে কাজের সুযোগ পেতেন। এখন সাধারণ ক্ষমায় অনেকে নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছেন। কিন্তু ভিসা বদল কিংবা নতুন ভিসা পাওয়ার কাজটি সহজ হয়নি। তাঁরা এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

যা যা পাওয়া যায়: ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙুর, তরমুজ, খেজুর, কমলা, আনারস, সাম্মাম (হলুদ তরমুজ), ড্রাগন, পেঁপে,আম, স্ট্রবেরি, অ্যাভোকাডো, মানডারিন, সফেদা, চেরি, পিচ, নাশপাতি, পেয়ারা, জলপাই, মাল্টা, বাতাবিলেবু, কাঁঠাল, কলা প্রভৃতি।

সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, আলু, টমেটো, শসা, শালগম, গাজর, ঢ্যাঁড়স, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, ভুট্টা, ব্রকোলি, ক্যাপসিকাম, কাঁকরোল, করলা, পটোল, কচুর লতি প্রভৃতি। এ ছাড়া আদা, রসুন, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচসহ শাকও বিক্রি হয়। বেচাকেনা চলে বিকেল চারটা থেকে রাত নয়টা এবং রাত তিনটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত। বেচাকেনার জন্য রয়েছে বড় পাঁচটি শেড।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বড় ফল ও সবজির এ বাজারে ২০০ পাইকারি আড়তদারের মধ্যে ১৫০ জনই বাংলাদেশি।: রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, সবজি রপ্তানি প্রতিবছর কমেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের শাকসবজি রপ্তানি হয়েছিল। গত অর্থবছর সেটি কমে ৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের দাঁড়িয়েছে।

রপ্তানি কমলেও শাকসবজি বাজারের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানির গন্তব্যস্থল সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত অর্থবছর দেশটিতে ১ কোটি ১৮ লাখ ডলারের শাকসবজি রপ্তানি হয়, যা মোট রপ্তানির ১৫ শতাংশ। চিটাগাং ফ্রেশ ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানাবলেন, আমিরাতের বাজারে বাংলাদেশ থেকে এখন প্রতিদিন ৬৫ টন ফল ও সবজি রপ্তানি হয়। এসব সবজি আল আভিরের বাজারেই যায়।

রপ্তানি কমার কারণ হিসেবে মাহবুব রানা বাড়তি পরিবহন ভাড়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ফল ও সবজি রপ্তানিতে সরকার ভর্তুকি দিলেও পরিবহন ভাড়া বেশি হওয়ায় আমরা অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পিছিয়ে পড়ছি।’ তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।

More News Of This Category