ডিজিটাল লেনদেনকে নিরাপদ করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইএমভি (ইউরোপ, মাস্টারকার্ড ও ভিসা) প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ব্যাংকার ও প্রযুক্তিবিদেরা। ইএমভি হলো ইউরোপে মাস্টারকার্ড ও ভিসার সমন্বিত রূপ, যা আর্থিক লেনদেনের আন্তর্জাতিক মান হিসেবে স্বীকৃত। এ সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কনা সফটওয়্যার লিমিটেড।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেসিস সফট এক্সপোর শেষ দিনে ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠান কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের আয়োজনে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টারঅপারেবিলিটি ইন ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুসন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রকৌশলী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেন।
সেমিনারের শুরুতে ইএমভি প্রযুক্তির ওপর মৌলিক ধারণা প্রদান করেন কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের বিপণন বিভাগের প্রধান মাহবুব বিন রহিম। তিনি আর্থিক লেনদেনে চিপভিত্তিক সেবা প্রণয়নের আন্তর্জাতিক মান ও বাংলাদেশের পরিস্থিতির তুলনা করেন। ইএমভি প্রযুক্তির প্রকৌশলগত দিক তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল শামীম।
বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত (ডিজিটাল) আর্থিক সেবার বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন কনা সফটওয়্যারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তৌহিদ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, মানুষ এখনো নগদ লেনদেন বেশি করে থাকে। গত তিন বছরে ই-কমার্সে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার বাড়লেও কমে যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার। এর কারণ কার্ডভিত্তিক প্রতারণা। তবে ইএমভি প্রযুক্তি এবং টু-লেয়ার অথেন্টিকেশনে আগ্রহী হচ্ছে ব্যাংক। ইএমভি প্রযুক্তিভিত্তিক কার্ডে ডেটা চিপ থাকে বলে তা ক্লোন করা কঠিন।
বিভিন্ন ধরনের কার্ডের প্রযুক্তি সুবিধাগুলো বর্ণনা করে মাহবুব বিন রহিম বলেন, ‘প্রতিটি লেনদেনের সময় একই ডেটা বারবার কার্ড ইস্যুয়ারের কাছে যাবে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়ে যায়। ক্লোন করা সহজ হয়। তিনি বলেন, ইএমভি প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে কার্ডভিত্তিক প্রতারণা দূর করা সম্ভব। এ প্রযুক্তির কার্ডের তথ্যের অনুলিপি করা অসম্ভব। অনলাইন লেনদেনে এখনো ঝুঁকি রয়েছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে ঝুঁকি কম, কারণ কার্ড অফলাইনেও কার্যকর। একই টার্মিনাল ব্যবহার করে ইএমভি কম্পোনেট ব্যবহার করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মোবাইল অ্যাপ হলো আগামী দিনের লেনদেনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এর সুবিধা দুদিক থেকেই আছে। ব্যবহারকারীরাও উপকৃত হবেন, ব্যাংকাররাও তাঁদের পণ্য ও সেবার তথ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারবেন। কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনাওয়ার হোসেন তানজিল বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নেতৃত্বে যেভাবে ব্যাংক আছে, ঠিক সেভাবেই ফিনটেক বা ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নেতৃত্বও ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তা করবে কিন্তু আর্থিক সেবা ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোই প্রদান করবে। তবে ডিজিটালাইজেশনে এগিয়ে আসতে হবে বড় বড় ব্যাংকগুলোকে। কারণ তাদেরকে পেছনে রেখে ফিনান্সিয়াল সেক্টরে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত সেমিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ৬০ জনেরও অধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।