1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

কক্সবাজারে বাস্তবায়ন হচ্ছে মহাপরিকল্পনা!

বাংলাদেশের পর্যটনের রাজধানী হিসেবে ইতিমধ্যেই কক্সবাজার ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এখানে বিশেষ করে ছুটির দিনে এত বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে যে, হোটেল-মোটেলগুলোতে ঠাঁই হয় না। এ কারণে এখানে অবকাঠামোগত ব্যবস্থার আরও উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকাকে আরও আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

বদলে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এ লক্ষ্যে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণে ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলোতে প্রায় প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

এর মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন, আধুনিক হোটেল-মোটল নির্মাণ, মহেশখালীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, সোনাদিয়াকে বিশেষ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, ইনানি সৈকতের উন্নয়ন, টেকনাফের সাবরায়েং ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ, শ্যমলাপুর সৈকতের উন্নয়ন, ঝিলংঝা সৈকতের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, কুতুবদিয়ায় বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ, চকোরিয়ায় মিনি সুন্দরবনে পর্যটকদের গমনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের আধুনিকায়নসহ ২৫ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার।

এছাড়া আরও চারটি নতুন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে আর কয়েকটি প্রকল্প। এসব বাস্তবায়িত হলে আগামীতে দেশের পর্যটন খাত আরও চাঙা হবে।

সূত্র জানায়, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও পিপিপির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারে যাতায়াত করার জন্য রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে। এই লাইন আরও সংস্কার করা হচ্ছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগ হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কক্সবাজারে আরও দুটি মোটেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিমান-নৌবাহিনীর উদ্যোগে সেখানে একটি বড় গেস্ট হাউস নির্মিত হচ্ছে। রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। সেগুলোকে সংস্কার করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ খাতে প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে। রামু ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

একে কেন্দ্র করেও আশপাশে নানা অবকাঠামো গড়ে উঠছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ হয়ে শাহপরীর দ্বীপের চার পাশে বেড়িবাঁধ নির্মিত হচ্ছে। এটিকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার থেকে শ্যামলাপুর পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মিত হয়েছে। এখন বাকিটুকুর কাজ চলছে। শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে উঠেছে বিশাল চর।

এখানে থেকে যেমন সেন্টমার্টিন দ্বীপকে দেখা যায়, তেমনি সাগর নদীর পানির মিলনস্থলের পার্থক্য বুঝা যায় পরিষ্কারভাবে। এগুলো পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে সেখানেও একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। টেকনাফের সাবরাং এলাকায় তৈরি হচ্ছে ইকো ট্যুরিজম পার্ক। নাফ নদীর মাঝে একটি চরকে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন এলাকা হিসেবে। কক্সবাজারের ঝিলংঝার নাজিরের টেক এলাকায় সৈকতের উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ (দ্বিতীয় পর্যায়) নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে আগামী ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

মহেশখালীকে পাওয়ার হাব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। শুধু মহেশখালীতেই বিনিয়োগ হচ্ছে লাখ কোটি টাকা। সোনাদিয়া দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কুতুবদিয়া দ্বীপে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। এটি দেখতে অনেক পর্যটক সেখানে যান। এ কারণে একে আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, কক্সবাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য ৭টি প্রকল্প নির্ধারিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও বন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ প্রকল্প।

এছাড়া খুলনায় আন্তর্জাতিক মানের হোটেল কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ, মংলায় থ্রি স্টার মানের হোটেল, কক্সবাজারের মোটেল উপল কম্পাউন্ডে আন্তর্জাতিক মানের ট্যুরিজম কমপ্লেক্স, সিলেটে বিদ্যমান পর্যটন কর্পোরেশেন মোটেল কম্পাউন্ডে ৫ তারকা হোটেল, কক্সবাজারে এন্টারটেইনমেন্ট ভিলেজ ও পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স তৈরি এবং খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার (পরিকল্পনা) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ে একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সেজন্য প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যারা টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে যাবেন তাদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করতে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। সুন্দরবনকে ঘিরে একটি স্টাডি প্রকল্পও নেয়া হবে। এরকম নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে।

পর্যটন সুবিধাদি বাড়ানোর জন্য চলমান কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে- চট্টগ্রামের পারকিতে পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন, পর্যটন বর্ষ উপলক্ষে দেশের কতিপয় পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকায় পর্যটন সুবিধার উন্নয়ন, রাজধানীর আগারগাঁও এ পর্যটন ভবন নির্মাণ, জাতীয় ট্রেনিং অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত সোনামসজিদ পর্যটন মোটেলের সংস্কার প্রকল্প অন্যতম। তথ্যসূত্র: যুগান্তর।

More News Of This Category