1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

এয়ারপোর্ট কাস্টমস ব্যাগেজ রুলস জেনে নিন!

বিদেশ থেকে ফিরতে কিংবা বিদেশে যেতে কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা একটি সাধারণ আইনানুগ প্রক্রিয়া। কিন্তু অপর্যাপ্ত সচেতনতা এবং যোগাযোগ ঘাটতির কারণে অনেকের কাছেই কাস্টমস এর কর্মকাণ্ডকে জটিল এবং বিরক্তিকর বলে মনে হয়। এরূপ নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়াতে একবার চোখ বুলিয়ে নিন কয়েকটি সাধারণ পণ্যের কাস্টমস নিষ্পত্তির প্রতিঃ-

১. মদ/মদ জাতীয় পানীয় : বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী নাগরিকদের জন্য মদ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। বিদেশী পাসপোর্টধারী নাগরিক হলে ১ লিটার পর্যন্ত আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত মদ সরকারি বিধি মোতাবেক বিক্রয়/ধ্বংসযোগ্য, তাই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।

২. সিগারেট : ১ কার্টন (২০০ শলাকা) পর্যন্ত সিগারেট শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত সিগারেট সরকারি বিধি মোতাবেক বিক্রয়/ধ্বংসযোগ্য, তাই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।

৩. মোবাইল ফোন : ২ টি শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। ৩-৫ টি পর্যন্ত শুল্ক-করাদি (প্রায় ৩৫%) পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে বাণিজ্যিক বিবেচনায় কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত মোবাইল ফোন Adjudication প্রক্রিয়ায় BTRC দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।

৪. ল্যাপটপ : ১ টি শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। ২ টি পর্যন্ত শুল্ক-করাদি (প্রায় ২০%) পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে বাণিজ্যিক বিবেচনায় কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত ল্যাপটপ পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় CCI&E দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।

৫. স্বর্ণ বার : ১ গ্রাম আনলেও শুল্ক-করাদি (প্রতি ১১.৬৭ গ্রাম এর জন্য ৩,০০০ টাকা) পরিশোধ করতে হবে। এভাবে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত স্বর্ণ বার পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় CCI&E দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে।

৬. স্বর্ণালংকার : ১০০ গ্রাম পর্যন্ত (এক প্রকারের অলংকার ১২ টির অধিক হবে না) শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে অতিরিক্ত প্রতি গ্রাম এর জন্য প্রায় ১,৫০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। বাণিজ্যিক পরিমান বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত স্বর্ণালংকার পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় CCI&E দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে।

৭. টেলিভিশন : ২১” পর্যন্ত ১ টি শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। ২২”-২৯” হলে ৫,০০০ টাকা, ৩০”-৩৬” হলে ১০,০০০ টাকা, ৩৭”-৪২” হলে ২০,০০০ টাকা, ৪৩”-৪৬” হলে ৩০,০০০ টাকা, ৪৭”-৫২” হলে ৫০,০০০ টাকা, ৫৩” এর বেশি হলে ৭০,০০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।

৮. নতুন শাড়ী/অন্যান্য কাপড়/কসমেটিক্স : ব্যাক্তিগত বিবেচনায় কয়েকটি পর্যন্ত শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। আরও কয়েকটি শুল্ক-করাদি (প্রায় ১৬০%) পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে বাণিজ্যিক বিবেচনায় কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত পণ্য পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় CCI&E দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।

৯. ওষুধ : জরুরী বিবেচনায় প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কিছুটা আনতে পারবেন। বাণিজ্যিক পরিমান বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আটককৃত ওষুধ পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় DGDA দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।

১০. বৈদেশিক মুদ্রা : বিদেশে যাওয়ার সময় পাসপোর্টে এনডোরস [বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত ক্ষেত্র ব্যাতিত] ব্যাতিত কোন বৈদেশিক মুদ্রা সাথে নিতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশী মুদ্রায় সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা এনডোরস ছাড়াই সাথে নিতে পারবেন। একজন বহির্গামী যাত্রী এক পঞ্জিকা বছরে সার্কভুক্ত দেশ এবং মিয়ানমারে সর্বোচ্চ ৫,০০০ মার্কিন ডলার/সমপরিমান এবং অন্যান্য দেশে সর্বোচ্চ ৭,০০০ মার্কিন ডলার/সমপরিমান অর্থাৎ বছরে সর্বমোট সর্বোচ্চ ১২,০০০ মার্কিন ডলার/সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা এনডোরস সাপেক্ষে নিয়ে যেতে পারেন।

১২ বছর এর কম বয়সী যাত্রীদের ক্ষেত্রে এ সীমা অর্ধেক। সর্বোচ্চ ৫,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত নগদ মুদ্রায় ইস্যু করা হয়। এনডোরস ব্যাতিত বৈদেশিক মুদ্রা সাথে নিলে কাস্টমস আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। আর মুদ্রা পাচার বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে। বিদেশ থেকে ফেরার সময় ইচ্ছেমত বৈধ বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারবেন। তবে ৫,০০০ ডলার/সমমান এর বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আনলে অবশ্যই কাস্টমস এর নিকট FMJ ফরম-এ ঘোষণা প্রদান করতে হবে।

সাময়িক আটক : শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে খালাসযোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক শুল্ক-করাদি পরিশোধ করার মত টাকা সাথে না থাকলেও ভয়ের কিছু নেই। সেক্ষেত্রে কাস্টমস তা সাময়িকভাবে আটক করবে। আটক রশিদ (DM) বুঝে নিবেন। সাময়িকভাবে আটককৃত পণ্য ২১ দিনের মধ্যে যথাযথ শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।

এ-ফরম (তফসিল-১ ফরম) ঘোষণা : বিদেশ থেকে আসার আগে কার্গোতে ব্যাক্তিগত মালামাল বুকিং দিয়ে আসলে বাংলাদেশে নেমেই/৭ দিনের মধ্যে এয়ারপোর্ট কাস্টমস এর নিকট এয়ারওয়ে বিল এবং পাসপোর্টসহ উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত “এ-ফরম” পূরণ করে মালামাল এর ঘোষণা প্রদান করবেন। অনুমোদিত “এ-ফরম” এর কপি নিয়ে মালামাল আসার পর প্রযোজ্য শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে এয়ারফ্রেইট ইউনিট থেকে মালামাল নিতে পারেন।

শুধুমাত্র ব্যাগেজ রুলস এর আওতায় একজন আগমনী যাত্রী ব্যাক্তিগত ব্যাবহার্য হিসেবে কতিপয় পণ্য শুল্ক-করাদিমুক্ত হিসেবে আনতে পারেন। এর বাইরে প্রযোজ্য শুল্ক-করাদি পরিশোধ ব্যাতিরেকে আমদানিকৃত পণ্যচালান খালাস গ্রহণের সুযোগ নেই। ব্যাক্তিগত/বাণিজ্যিক/অনলাইন/কুরিয়ার/ডাক/পার্সেল/কার্গো/কনটেইনার/উপহার যে ভাবেই আমদানি করুন না কেন, ‘আমদানি নীতি আদেশ’ মেনে আমদানি করতে হবে।

ভ্যাট নিবন্ধন/আইআরসি/এলসি প্রভৃতি এর মাধ্যমে আমদানি করতে হবে। নাহলে অতিরিক্ত প্রায় ৫৩% জরিমানা পরিশোধ করতে হয়। শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত জরুরি বিবেচিত হওয়া সাপেক্ষে স্বল্পতর পরিমান পণ্যে ক্যাজুয়াল ভ্যাট নিবন্ধন আবেদনের বিপরীতে জরিমানা মওকুফ করা হতে পারে। মালামাল আসার পর অনুমোদিত সিএন্ডএফ এজেন্ট নিয়োগ করবেন, ডকুমেন্টস জমা দিবেন।

বাকি কাজ/আনুষ্ঠানিকতা সিএন্ডএফ এজেন্ট করবে। আপনি নির্ধারিত শুল্ক-করাদি, গুদাম ভাড়া আর সিএন্ডএফ কমিশন জমা দিয়ে মালামাল বুঝে নিবেন। অবশ্যই সকল টাকা জমা দিবেন ব্যাংক-এ/সরকারি রশিদ এর মাধ্যমে। এর পরেও কোন হয়রানির শিকার হলে কিংবা জানার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস ডেস্ক এর উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। আমদানি-রপ্তানির শর্তাবলী এবং শুল্ক করাদির হার সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জানার প্রয়োজনে বলবৎ “আমদানি নীতি আদেশ, রপ্তানি নীতি আদেশ এবং বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ” পড়তে পারেন।

চোরাচালানের অভিযোগে স্বর্ণ/বৈদেশিক মুদ্রা আটকের বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃক তাৎক্ষণিকভাবেই আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণতঃ বিমানবন্দর থানায় ফৌজদারি মামলা এবং কাস্টমস বিভাগীয় মামলা দু’টোই দায়ের করা হয়। আটককৃত স্বর্ণ/বৈদেশিক মুদ্রা যেহেতু উভয় মামলারই প্রধান আলামত, সেহেতু উক্ত স্বর্ণ/বৈদেশিক মুদ্রা সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করার প্রয়োজনে দ্রুততার সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক এর ভল্টে অস্হায়ী জমা রাখা হয়।

অতঃপর ফৌজদারি মামলায় বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক ভিন্নতর কোন নির্দেশনা না থাকা সাপেক্ষে, কাস্টমস বিভাগীয় মামলায় সাধারণতঃ উক্ত স্বর্ণ/বৈদেশিক মুদ্রা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন উক্ত বাজেয়াপ্তকৃত স্বর্ণ/বৈদেশিক মুদ্রা স্হায়ীভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে সরকার যেকোন সময় ইচ্ছে করলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে স্বর্ণ/বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রয়/বিনিময় বা ভিন্নতর কোন নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে।

অপরিচিত ব্যাক্তি এবং ব্যাগেজ-কে বিশ্বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই না জেনে অন্য কারো দেওয়া মালামাল বহন করবেন না।
গোপণ সংবাদদাতার পুরস্কার : স্বর্ণ/বৈদেশিক মুদ্রা/মাদক দ্রব্য/আগ্নেয়াস্ত্র/পুরাকীর্তি/বন্য প্রাণি/রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত বস্তু ইত্যাদি সহ আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধ যে কোন পণ্যের চোরাচালান সম্পর্কে এয়ারপোর্ট কাস্টমস-কে তথ্য দিন, সেই সাথে গোপণ সংবাদদাতা হিসেবে জিতুন আকর্ষণীয় আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা। আপনার পরিচয় সংক্রান্ত গোপণীয়তা রক্ষা করা কাস্টমস এর ঐতিহ্য।

এছাড়াও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা, শুল্ক-করাদি, যাত্রী সেবা এবং চোরাচালান সংক্রান্ত যে কোন তথ্য বিনিময়ের জন্য আমাদের ইনবক্স-এ লিখুন কিংবা কথা বলুন +৮৮-০২৮৯০১৭৫৮ নম্বরে। “এয়ারপোর্ট কাস্টমস আপনার সেবায় নিবেদিত” ধন্যবাদ। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

More News Of This Category