1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

‘বাঙালি মানেই দশটা-পাঁচটার চাকরি।’

আমাদের একটা সমস্যা হলো আমরা শুরুতে ভাবি লেখাপড়া শেষ করে চাকরী করবো। আর চাকরী না পেলে বেকার। তো সারা জীবন খবর নিতে থাকি কোন চাকরী কেমন? কোনটা ভালো, সরকারী না বেসরকারি, ব্যাংক না এনজিও। কার বেতন কত ইত্যাদি। ফলে দিনে দিনে আমাদের মানসিকতা আরো বেশী করে আমাদের ধারনার সাথে সেট হয়ে যায়।

কিন্তু তা না করে আমরা যদি খুব অল্প বয়স থেকে নিজে কিছু করার কথা ভাবি। বা একজন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। তখন স্বভাবতই আমরা ভাবতে থাকবে, কোন ব্যবসাটা আমাদের জন্য সহজ, কোনটা আমি ভালো বুঝি, কোনটার ফিউচার ভালো, কোন সিজনে কোন ব্যবসাটা উঠলো আর কোনটা পড়ে গেলো?

তখন পত্রিকার পাতায় ব্যবসায়িক খবরটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। অর্থ ও বাজার বিষয়ক ম্যাগাজিনের আমি গ্রাহক হবো। কোথাও বড়ো ব্যবসায়িক প্রোগ্রাম হলে যেতে ইচ্ছে করবে। কোনো ব্যবসায়ীর সাথে পরিচয় হলে তার কাছ থেকে এটা ওটা জানতে ইচ্ছে করবে। দেখা যাবে ১০/১৫ বছরের শিক্ষাজীবনে আমার প্রাথমিক প্রস্তুতিটা হয়ে গেছে। এজন্য নিজে এবং বংশধরদের মাঝে উদ্যোক্তা হওয়ার বীজ বুনে দেয়া চাই।

ব্যবসায় বাণিজ্যের পেছনের দিকে যদি আমরা যাই দেখবো আরবরা বণিকের জাতি হিসেবে হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে কয়েক দশক লেগে গিয়েছিলো। ইংরেজরা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে লেগেছে প্রায় এক শতক। কিন্তু হাজার বছরেও ব্যবসায়িক আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যদিও স্টার বিজনেসম্যান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য। তবু জাতি হিসেবে বনিক জাতি তারা নন।

কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ শুরু হয়েছে ব্রিটিশ ভারতের ২৯০ বছরের সময়ে। এই সময়ে নেতৃত্ব ছিলো ব্রিটিশদের, ব্যবসায় ছিলো ইংরেজদের আর ভারতীয়রা কেবল সেখানে কেরানীগিরি করে দিন কাটানোর স্বপ্ন দেখে বড়ো হয়েছিল। বাংলার মানুষ হয় জমিদার হতে চেয়েছে নয়তো মাস্টার বড়োজোর উকিল ব্যারিস্টার কিন্তু ব্যবসায়ী হতে চায়নি। এটা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ যে, আমরা চাকরী করে খেতে পছন্দ করি।

বাঙালীর ক্ষেত্রে একথা আরো বেশী প্রযোজ্য। বাঙালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যে বিকাশ ঘটেছে তাও চাকরীর প্রত্যাশা ভিত্তিক। শিক্ষা মানে চাকরী এই দুটো শব্দ যুগ যুগ ধরে সমার্থক হয়ে আছে। ‘বাঙালি মানেই দশটা-পাঁচটার চাকরি।’ ‘পৃথিবীর সব প্রান্তে, বিশেষ করে উন্নত দেশসমূহে, “বাঙালি” পরিচয়টির অর্থ বাংলাদেশের মানুষ।’ বাঙালিরা চাকরি খোঁজে, অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজকেই তার জীবনের গন্তব্য মনে করে, কিন্তু দেশে হোক, কিংবা বিদেশে হোক, কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করে না, ফলে তাদের হাতে ব্যবসা করার পুঁজি আসে না, ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষদের এখন দেখা যাচ্ছে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে, আবার রাস্তায় হয়তো ফেরিওয়ালার কাজও করছে।

‘শুধু ইতালি নয়, ফ্রান্স, স্পেনসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশেই চীনা-জাপানি বাদ দিয়ে সবচেয়ে পরিচিত এশীয় মুখটি হচ্ছে বাংলাদেশের।’ সেখানে যে বাঙালী উদ্যোক্তা হতে চায়না চাকরী করে খেতে চায় এটা শত বছরের এক প্রবণতা। কিন্তু একটা আশার ব্যাপার আছে বাংলাদেশের মানুষ এই প্রবণতা আস্তে আস্তে বের হয়ে আসছে। দুটি বিষয় আমাদেরকে এই প্রবণতা থেকে বের হতে সাহায্য করেছে এর একটি হলো বিদেশ যাত্রা, বিদেশে গিয়ে, বিদেশীদের দেখে, বিদেশের জন্য খেটে আমাদের উপলব্ধি এসেছে। আজকাল অনেকে বিদেশ থেকে এসে দেশে ব্যবসায় করছেন। কারণ বিদেশ থেকে এসে চাকরী করার মত অবস্থা থাকেনা। অন্যটি হলো জনসংখ্যার কারণে বেকারত্ব, বেকারত্বের কারণে সস্তা শ্রম, সস্তা শ্রমের কারণে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ। এই শিল্প দেশে হাজার হাজার উদ্যোক্তার জন্ম দিয়েছে।

আবার অনেকে বিদেশেই ব্যবসা করছেন। কারণ বিদেশে আমাদের দেশের লোকদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অডজব করতে হয় ফলে তারা সব সময় চান এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে। এজন্য প্রথমে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন পরে একসময় মূলধন জোগাড় হলে অন্যকিছু ভাবেন। তবে বুদ্ধিমান বাংলাদেশীরা ব্যবসাটা করেন ইনটেলিজেন্ট ওয়েতে বিশেষ করে প্রথম দিকে যারা ফাস্ট ওয়ার্ল্ডের দেশগুলোতে গিয়েছেন – তারা প্রথমে কষ্টার্জিত সঞ্চয় থেকে বাড়ী করেন তারপর বাড়ী মর্টগেজ রেখে লোণ নিয়ে ব্যবসায় করেন। এতে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে ব্যবসায় নামলে হয়তো একটু বাড়তি সুবিধা মিলে, আর জীবনের অর্জিত একমাত্র সম্বল বাড়ির বিনিময়ে ব্যবসায় করার কারণে গরজটাও বেশী থাকে। আর চাকরী বাকরী বা টেক্সি চালিয়ে ততদিনে সেখানকার সমাজ অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।এই ধারণাটাও ব্যবসায়ে সফলতায় সাহায্য করে।

আমি অন্যের কর্মচারী নই, নিজের প্রতিষ্ঠানের মালিক। এজন্য আমাদের আগে থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা রাখেতে হবে। কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি তা করা না যায় তাহলে অন্য কিছু। আমরা চীনের দিকে তাকালে বুঝতে পারি। উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতাই তাদেরকে অর্থনীতির মোড়ল বানাচ্ছে। আর তার বিপরীতে আমরা খুব ছোটখাটো জিনিস যেগুলো খুব সহজে তৈরী করা যায় সেগুলো আমরা চীন থেকে আমদানি করি, যেমন ধরুন একটা হাতুড়ী ধরুন একটা সেফটিপিন। একবার ভেবে দেখুন আমরা কতটা পরনির্ভরশীল জাতি।

মানসিকতা একটা বিরাট ব্যাপার উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। মানসিকতা থাকতে হবে। এই মানসিকতার মধ্যে রয়েছে: ১. স্রোতে গা না ভাসিয়ে দিয়ে অন্যরকম কিছু করার চিন্তা। ২. রয়েছে নিজের আত্মবিশ্বাস রেখে কিছু একটা করে দেখানোর জেদ। ৩. রয়েছে ঝুঁকি নিয়ে সেটা সামাল দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ৪. সামনের পথটা অনেক দূর অবধি দেখতে পারার মতো শক্তি। আগামী দিনগুলোতে কি হবে তা বুঝতে হবে এখনই। ৫. এবং কিছু ব্যক্তিগত যোগ্যতা।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

More News Of This Category