1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

থেমে থাকা নয়, ‍শুরুটা হোক ব্যবসা!

“পরের অধীনে কোনো কাজ নয়, যা পারি নিজে করবো”- অনেক শিক্ষিত এবং চাকরি করার যোগ্য লোকের মাঝেও দেখা যায় এ চেতনা। আর এ চেতনা ধারণ করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে যারা দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ, তারাই কেবল হতে পারেন সফল এন্টারপ্রেনিয়ার বা সফল উদ্যোক্তা। উদ্যোগ তো সবাই নিতে পারে কিন্তু সফল উদ্যোক্তা হওয়ার রাস্তা কিন্তু নেহাতই সহজ নয়। আর তাইতো উদ্যোগ নেয়ার পূর্বেই যাচাই করে নিতে হয় নিজের চারপাশ এবং উদ্যোগের সম্ভাব্যতা। চলুন প্রথমেই দেখা যাক একজন সফল উদ্যোক্তার কি কি গুণ থাকতে হয়ঃ

হার না মানা মনোভাবঃ আপনি যদি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান তবে আপনার হার না মানা মনোভাব থাকতে হবে। চেতনা থাকতে হবে যে কাজটি আপনি শুরু করবেন তার শেষ আপনাকে অবশ্যই করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ আপনি নিচ্ছেন সে কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ থাকা অত্যাবশ্যক। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে ছোট জীবনে কোনো কাজে শতভাগ সন্তুষ্টি বা সফলতা অর্জন কারো পক্ষেই সম্ভব না। এখানে যে কোনো উদ্যোগেও ভাল সময়, খারাপ সময় থাকবেই। তবে দিনের শেষে সেই সফল হয় যে খারাপ সময়টাকেও সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারে।

বুদ্ধিমত্তাঃ এর মানে এই নয় যে, আপনাকে একজন স্কলার হতে হবে। এন্টারপ্রেনিয়ারদের বুদ্ধিমত্তা একটু ভিন্ন ধরনের। এক্ষেত্রে আপনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন সে ব্যাপারে আপনার থাকতে হবে পুরোপুরি স্বচ্ছ ধারণা। আর এ ধারণা রাখতে হবে ব্যবসা শুরু করার পূর্বেই। কমন সেন্স এর সাথে আস্তে আস্তে শুরু হওয়া আপনার অভিজ্ঞতাই আপনাকে করে তুলবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে বুদ্ধিমান।

আমাদের দেশে দুইভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রথমত ছোট থেকে ব্যবসা শুরু করে ক্রমে কর্পোরেট গ্রুপে রূপ লাভ করা। দ্বিতীয়ত উদ্যোক্তাদের উত্তরসুরী হিসেবে কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া। এ পর্যায়ে যারা পারিবারিক সূত্রে বড় বিজনেসের ভার পান তারা মেধা এবং কৌশলের উপর নির্ভর করে সেটি বড় হতে এবং পরিচালনা করতে থাকে। পক্ষান্তরে যারা শূন্য থেকে শুরু করে ক্রমে বিশাল উদ্যোক্তায় পরিণত হন তাদের থাকে কর্মজীবনে বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা।

একুশ শতকের এই সময়ে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে সফলতা আনয়নের জন্য বেশ কতগুলো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই শুরু করতে হবে বিজনেস কর্মকান্ড। এ জন্যে প্রথমেই থাকতে হবে শিক্ষা। একই সাথে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিজনেস প্রসঙ্গে ধারণা থাকা প্রয়োজন। কেননা এখন ব্যবসার গন্ডি শুধু দেশ নয়, পুরো বিশ্বই এর সীমারেখা।

উদ্যোক্তা হতে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। তিল তিল করে গড়ে তোলা বিজনেস এক সময় বিশাল শিল্প সম্রাজ্য করে সাজাতে সততা আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এরপর আপনাকে হতে হবে ডায়নামিক এবং চৌকস। কেননা উদ্যোক্তা হতে আপনাকে পিওন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রধানের সাথে পর্যন্ত কথা বলতে হবে। সর্বোপরি হতে হবে হিসেবী-সেই হিসেব হবে আর্থীক ও সময় বিবেচণায় সঠিক সিদ্ধান্ত। বিজনেসের প্রতিটা পর্বে নিখুঁত হিসেবী হয়ে গড়ে তুলতে হবে শিল্প কারখানা।

মূলধনঃ হার না মানা মনোভাব, বুদ্ধিমত্তার সাথে সাথে আপনাকে আরেকটি বিষয় উদ্যোগের শুরুতেই নিশ্চিত করতে হবে আর তা হচ্ছে প্রয়োজনীয় মূলধন। বিশেষ করে প্রথম বছরের সমস্ত খরচ এবং বিনিয়োগের পুরো টাকাই থাকা চাই আপনার হাতে। পরের বছরগুলোর জন্য হয়তো তারল্য নির্ধারণ করে আপনি ব্যবসার আয় হতেই সব খরচ নির্বাহ করতে পারবেন। আপনার হাতে যদি উদ্যোগ শুরু করার প্রারম্ভিক টাকাও না থাকে তবুও পিছনে হটার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের অনেক সরকারি বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও তৈরি আছে আপনাকে সাহায্যের জন্য। এর মধ্যে অনেক বছর যাবত এসএমই বা ক্ষুদ্র ঋণের মাধমে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু বেসরকারি ব্যাংকের বিভিন্ন রকম সাহায্য স্কিম অবশ্যই উল্লেখ করার মতো। পাঠক, চলুন জেনে নেয়া যাক এ সব ব্যাংকের এসএমই স্কিমগুলোর আদ্যাপান্ত।

আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেডঃ বিগত দু-দশক ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমই এর অবদান স্মরণ করে এবিবিএল বিভিন্ন সেক্টরে এসএমই লোনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি করেছে। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ সমস্ত ব্যাংক ঋণের ৫৪%। সত্যি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য এ এক সুখবর বটে! এবিবিএল তার গ্রাহকদের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সাউথ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটি (এসইডিএফ) কে সাথে নিয়ে তাইতো “পার্টনার ইন প্রোগ্রাম” নামে যৌথ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এক্ষেত্রে এসইডিএফ আরব বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তার গ্রাহকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সংগঠন পরিচালনায় গাইড দিয়ে থাকে। যোগাযোগঃ এসএমই ক্রেডিট ডিভিশন, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড, বিসিআইসি ভবন, ৩০/৩১, দিলকুশা। ফোনঃ ৯৫৬০৩১২, ফ্যাক্সঃ ৭১৬৯১৬৯

ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডঃ বাংলাদেশে এসএমই উন্নয়নে ব্র্যাক ব্যাংক কাজ করছে নিরলসভাবে। ব্র্যাক ব্যাংক তাদের এসএমই ইউনিটের ছোট পরিসরের লোনের কাজ করে “অনন্য” নাম দিয়ে। “অনন্য” এর আওতাধীন নির্দিষ্ট খাতে দ্রুত এবং কোয়ালিটি ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং বেকারত্ব দূর করা। অনন্য’র আওতায় ব্র্যাক ব্যাংক ৩ থেকে ৩০ লাখ টাকার ঋণ দিয়ে থাকে। মূলত লোনের টার্মগুলো হয়ে থাকে তিন, চার, ছয়, সাত, নয়, বারো, পনেরো, আঠারো, চব্বিশ, ত্রিশ এবং ছত্রিশ মাস পর্যন্ত। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আঠারো বা তদুর্ধ মাস প্রযোজ্য হয়ে থাকে। এই লোনটি পেতে হলে গ্রাহককে নির্দিষ্ট শাখায় অবশই “অনন্য” একাউন্ট খুলতে হবে। আরো বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন যোগাযোগঃ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ১ গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২। ফোন : ৮৮২৪০৫১-৪।

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডঃ যে সমস্ত ছোট উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ টাকার অভাবে বেশিদূর এগোতে পারে না তাদের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা ব্যাংকের এসএমই ক্রেডিট প্রোগ্রামের কার্যক্রম। মূলত মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ এবং ছোট ব্যবসায়িদের কথা মাথায় রেখে “ওভার ড্রাফট” এবং “টার্ম লোন” নামের দুটি প্রজেক্ট এখানে চালু আছে। একজন উদ্যোক্তা তার ব্যবসার ধরণ বুঝে এখান থেকে ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে “ওভার ড্রাফট” স্কিমের জন্য এক বছর এবং “টার্ম লোনের” ক্ষেত্রে এক বছর থেকে তিন বছরের মেয়াদ পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়ে থাকে। বারো পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট ছাড়াও এক্ষেত্রে অন্যান্য ফি প্রদান করতে হয়। যোগাযোগঃ ঢাকা ব্যাংক, হেড অফিস, বিমান ভবন, ১০০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা-১০০০, ফোনঃ ৯৫৫৪৫১৪, ফ্যাক্সঃ ৯৫৫৬৫৮৪।

ঋণ আবেদনের জন্য জরুরী কাগজপত্রঃ ব্যবসা নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সের, আয়কর সনদ, ভ্যাট সনদ কপি। ব্যাঙ্ক ট্রাঞ্জেকশানের কপি। সমস্ত মেশিনারি, ইক্যুইপমেন্ট, ভেইকেলের বর্ণনা। লিজ নেয়া জমির ক্ষেত্রে লিজের চুক্তিনামা। জমি কেনার প্রস্তাব থাকলে বর্তমান মালিক পক্ষ থেকে আনা চিঠি। চলমান ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আর্থিক বিবরণী যেমন- চলমান সম্পত্তি, স্থায়ী সম্পত্তি ইত্যাদির বিবরণ। দালান ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাশ করা প্ল্যান এবং দামের বিবরণ। ব্যবসায়ের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া ছাড়পত্র। এছাড়াও ব্যবসা ভেদে একেক ব্যাংক একেক রকম কাগজপত্র চেয়ে থাকে।

পরিশেষে বলা যেতে পারে আপনি যদি স্বাধীন চেতা হয়ে থাকেন, নিজের প্রতি যদি আপনার থাকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস তবে এখন সময়টা আপনারই। নিজেকে যাচাই করে ব্যবসার ধরণ বুঝে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারেন কোনো শিল্প উদ্যোগে। এক্ষেত্রে অর্থায়নের ব্যাপারে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক আর এনজিওগুলোকে তো পাচ্ছেন হাতের কাছেই। সুতরাং গড়ে তুলুন নিজের ব্যবসা, নিজের ভুবন।

তথ্যসূত্র: বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম।

More News Of This Category