1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই জেনে নিন!

গাড়ি বাছাই শখের বসে হোক আর প্রয়োজনের তাগিদে হোক, একটি গাড়ির মালিক হওয়াটা বেশ সৌভাগ্যের ব্যাপার। মধ্যবিত্ত যারা, সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মিল রেখে খুঁজে নিতে পারেন আপনার পছন্দের মডেলটি। একটি ভালো মানের গাড়ির পেছনে আপনার মূল্যবান অর্থ ব্যয় করলে সেটা অনেকদিন পর্যন্ত চালাতে পারবেন।

আবার যাদের সেভিংস নিয়ে ভাবনা নেই,মাসিক যা উপার্জন এবং অন্যান্য খরচ নিয়েও চিন্তার অবকাশ নেই,ব্যাঙ্ক লোন যাদের হাতের মুঠোয়, এরপরও তারা আটকে যাচ্ছেন এক জায়গাতেই। নানা ব্র্যান্ডের গাড়ির বিজ্ঞাপনের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে একাকার। যেটাই কিনবেন ভাবছেন,পরেই মনে হচ্ছে অন্যটা বেশি ভাল। গাড়ি কেনার আগে জানা প্রয়োজন গাড়ির ধরণ সম্পর্কে। গাড়ির এই শ্রেণীবিন্যাস সাধারণত করা হয় তাদের কার্যক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। আমাদের দেশে সাধারনত সেলুন/সেডান এবং সাভ মডেলের গাড়ি বেশী দেখা যায়।

সেলুন/ সেডানঃ
গাড়ির জগতে সবচেয়ে পরিচিত বডি স্টাইল হচ্ছে সেলুন বা সেডান প্রকৃতির গাড়ি। দুই ধরনের নাম হওয়ার কারন হচ্ছে আমেরিকা, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই শ্রেণীর গাড়ি সেডান নামে পরিচিত এবং যুক্তরাজ্যে এটি সেলুন নামে পরিচিত। এই শ্রেণীর গাড়িতে ৪-৫ জন বসার ব্যবস্থা থাকে যার কারনে একে যাত্রীবাহী গাড়িও বলা হয়ে থাকে। এর ছাদ সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে এবং পিছনের জানালার সাথে নিচে নেমে যায়। গাড়ির পিছনে ট্রাঙ্ক থাকে যেখানে মালপত্র বহন করা যায়। ইঞ্জিন সাধারণত সামনের দিকে হুড বা বনেটের নিচে থাকে। এই গাড়িগুলো সাধারণত পারিবারিক গাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরন স্বরূপ বলা যায় মার্সিডিজ-বেঞ্জ সি ক্লাস কিংবা টয়োটা করল্লা ইত্যাদি।

সাভ (SUV)ঃ
স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেইকেল সংক্ষেপে সাভ নামে পরিচিত এই গাড়িগুলোর সাথে স্টেশন ওয়াগনের কিছুটা মিল রয়েছে। তবে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে এই ধরনের গাড়িগুলো হাল্কা মানের ট্রাকের চেসিসের উপর ভিত্তি করে বানানো হয় এবং এরা যেকোনো ধরনের রাস্তায় চলার উপযোগী।এরা ৪×৪ কিংবা ক্রসওভার নামেও পরিচিত। এই ধরনের গাড়িগুলো সাধারণত দীর্ঘ যাত্রার জন্য উপযোগী। তবে এদের মাইলেজ খুব কম এবং গাড়ির ওজন বেশি। ৫ দরজা বিশিষ্ট এই গাড়িগুলো ৫-৮ বা তারও বেশি যাত্রী বহনে সক্ষম সেই সাথে পিছনে মালপত্র নেওয়ার জায়গাতো রয়েছেই।

পরিচিত গাড়িগুলো হচ্ছে হোন্ডা সিআরভি, ল্যান্ড রোভার ফ্রিল্যান্ডার, টয়োটা ল্যান্ডক্রুইজার, মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার, পাজেরো, ফোর্ড কুগা, অডি কিউ৩, কিয়া স্পোর্টেজ ইত্যাদি। যদি ঠকতে না চান তবে অবশ্যই প্রথমে একটি প্ল্যান করুন। কেন গাড়ি কিনবেন, বাজেট কত থাকবে এবং এই বাজেটে কি গাড়ি কিনবেন? এটা করা জরুরী। যে জন্য গাড়ি কিনতে যাচ্ছেন তা কি আপনার প্রয়োজন বা শখ মেটাবে কিনা তা বুঝে নিন। বাজেট ঠিক করে এবার মার্কেট রিসার্চ করে নিন বাজারে গাড়ির দাম কত।

গাড়ির মডেল পছন্দের ক্ষেত্রে গাড়িটির খুচরা পার্টস সহজপ্রাপ্য কিনা সেটাও কনফার্ম হয়ে নিন। আবার আরও একটি দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে গাড়ি কেনা নিয়ে। আর সেটা হল, গাড়ি পুরনো নাকি নতুন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জেনে নিন নতুন-পুরোনো গাড়ি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
গাড়ি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুরোনো গাড়িতে তাৎক্ষণিক কিছুটা অর্থ সাশ্রয় হলেও দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এটি লাভজনক না-ও হতে পারে। কারণ, এসব গাড়ির বিক্রয়োত্তর কোনো সেবা পাওয়া যায় না। নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য গাড়ির কোনো ধরনের নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) থাকে না।

তাই নানা দিক বিবেচনায় পুরোনো গাড়ির চেয়ে নতুন গাড়িই ভালো এবং দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক। এ ছাড়া পরিবেশের কথা চিন্তা করলে পুরোনো গাড়ির চেয়ে নতুন গাড়ি অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব।

আবার যদি একটু অন্যভাবে ভাবেন,নতুন গাড়ি কিনতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই যদি একটু পুরনো ধাছের গাড়ি কেনা যায়, শুধু যে আপনার খরচ অনেকখানি কমে যায় তা নয়। ইন্সুরেন্স খরচও অনেকখানি কমে যায়। নীচের দশটি নির্দেশনা গাড়ি কেনার সময় মেনে চললে ক্রেতার গাড়ি বাছাই করতে সুবিধা হবে আশা করি।

আকার:
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে ব্যাবহারের জন্য আপনি একটি সঠিক আকারের গাড়িই চাইবেন। আর জ্বালানির জন্য বেশি খরচ করতে না চাইলে টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি উৎকৃষ্ট। যেভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে তাতে আপনার উচিৎ ছোট সাইজের গাড়ি পছন্দ করা যাতে জ্বালানির পেছনে বড়
অংকের টাকা খরচ করতে না হয়। একই সাথে নতুন গাড়ি কিনতে গেলে আপনাকে এর ষ্টোরেজ এবং জায়গা নিয়েও ভাবা উচিৎ। এক মিনিটে চিন্তা করে নিন আপনি গাড়িতে পুরো পরিবারকে এবং সেই সাথে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নিতে চান।
সেজন্যই আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারবে এমন সাইজের গাড়িই কেনা উচিৎ।

অনেক সময় নিয়ে ভাবুনঃ
সাধারনত কেউ গাড়ি কিনলে দীর্ঘদিন ব্যবহারের আশাতেই কিনেন। যেহেতু বাংলাদেশে গাড়ি সস্তা নয়, তাই ভবিষ্যতে যাতে আরেকটি কিনতে না হয় সেভাবেই চিন্তা করা উচিৎ। এটি করতে আপনার উচিৎ নির্ভর করা যায় এমন একটি গাড়ি কেনা এবং ভালো মত সেটি দেখ-ভাল করা।
একইভাবে গাড়ি লক্ষ্য করার সময় এটি ঘন্টায় কত মাইল যেতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। যদিও বাছাই করতে আপনাকে একটু বেশি খরচ আর সময় ব্যয় করতে হবে, কিন্তু এর ফলে আপনি অনেকদিন পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দে গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, গাড়ি কেনার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল না করলে ভবিষ্যতে এর পেছনে অনেক বেশি খরচ করতে হবে।

অনেকগুলো গাড়ি ঘুরে দেখুন:
কোন একটি বা দুটি বিশেষ মডেলের গাড়ি দেখে পছন্দ হয়ে যাওযাটা খুবই সহজ ব্যাপার। অনেক সময়, গাড়ির ডিলার কিংবা নিজের গাড়ি বিক্রি করবেন এমন ব্যক্তির কাছে গেলে আপনার অনেক গাড়ি খুঁজে দেখার সুযোগ হয় না। এসব ক্ষেত্রে গাড়ি কিনতে বেশি দাম দিতে হতে পারে। এর পরিবর্তে দাম মেটানোর আগে আপনার উচিত চার-পাঁচটা গাড়ি খুঁজে দেখা। এর ফলে আপনাকে বেশি দাম দিতে হবে না কিংবা কোনো নির্দিষ্ট গাড়ির প্রেমে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে গাড়ি একটি পণ্য এবং একটি নির্দিষ্ট ডিজাইন কিংবা স্টাইলের গাড়ির প্রেমে পড়ে যাওয়া উচিত নয়।

পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে টেস্ট ড্রাইভ করা:
দেখা যায় কেউ যখন তার ব্যবহৃত গাড়িটি বিক্রি করে দিতে চায় তার একটি প্রবণতা থাকে ক্রেতাকে অকেজো জিনিস দিয়ে ঠকানোর। এটা থেকে রক্ষা পেতে একজন বুদ্ধিমান ক্রেতার উচিত পুঙ্খানুপুঙ্খ টেস্ট ড্রাইভ করা। আপনি যখন টেস্ট ড্রাইভের জন্য নিবেন অবশ্যই তখন এটি বিভিন্ন রাস্তায় কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য নিবেন।

যদিও এটি আপনার কাছে অনেক বেশি মনে হতে পারে কিন্তু এর ফলে আপনি গাড়ির জটিল সমস্যাগুলো ধরতে পারবেন। বিক্রেতা যদি এটি করতে দিতে না চায় তাহলে বুঝতে হবে তিনি গাড়িটির যান্ত্রিক সমস্যাগুলো লুকাতে চাইছেন এবং সেক্ষেত্রে সেই গাড়ি কেনা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে।

জেনে নিন কিভাবে গাড়ির সমস্যা খুঁজে বের করতে হয়ঃ
গাড়ি পরীক্ষা করার সময় হুডের নীচে খেয়াল রাখা উচিত। ক্রেতাকে বুঝতে হবে যে কোন বিষয়গুলো খেয়াল করা উচিত। এটার জন্য আপনার এমন কোনো বন্ধুকে নিয়ে যান যিনি গাড়ির যন্ত্রপাতি ভালো বোঝেন এবং খুব দ্রুত গাড়ির উপর নজর বুলিয়েই বুঝতে পারেন। অবশ্য আপনি নিজেই কিছু বিষয় পরীক্ষা করতে পারেন যেমন তেলের ট্যাঙকিতে ছিদ্র আছে কি না এবং অকেজো কোন পার্টস আছে কিনা।
এগুলো ছাড়াও আপনাকে জানতে হবে কিভাবে মূল সমষ্যাগুলো খুঁজে বের করতে হয়।

মোট খরচের কথা ভাবুন:
আগেই বলা হয়েছে গাড়ি বাছাই করার আগে জ্বালানির খরচের কথা চিন্তা করুন। এটার সাথে এর ইন্স্যুরেন্স এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচের কথাও ভাবতে হবে। যেহেতু এই খরচ মডেল ভেদে ভিন্ন হয়, তাই চিন্তা ভাবনা করে বাছাই করলে আপনি অনেক টাকা বাঁচাতে পারবেন। কোন গাড়িতে সবচেয়ে কম খরচ হয় সেটা বাছাই করা খুব সহজ নয়। তাই আপনি যদি ছোট আকৃতির এবং নির্ভরযোগ্য কোনো টয়োটা কিনেন, তাহলে ভবিষ্যতে জটিল কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না, যার ফলে বাড়তি টাকাও খরচ হবে না।

দরদাম করা:
ক্লাসিফাইড সাইট থেকে গাড়ি কিনতে গেলে যতটা সম্ভব দরদাম করুন। যদিও এটা সব সময় আনন্দদায়ক নয় কিন্তু এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর সঠিকভাবে দরদাম করতে না পারলে আপনাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে।
ভালো দরদাম করার একটি সহজ উপায় হল হাতে নগদ টাকা নিয়ে যাওয়া। এর ফলে বিক্রেতা নগদ টাকা দেখে তৎক্ষনাত বিক্রি করার জন্য দাম অনেকখানি কমিয়ে দেয়।

পরিবারের সবার মতামত নিন:
অবশ্যই পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞাসা করুন তারা কি ভাবছে। টাকা পরিশোধ করার আগে আপনার স্ত্রী/ স্বামী এবং সন্তান এটি পছন্দ করেছে কি না জানতে চান। যেহেতু এসব ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই এটি আপনার বিনিয়োগ কতটা সঠিক তা নির্ধারন করে দিবে। অন্যদিকে, এর ফলে আপনাকে গাড়ি নিয়ে সামনে কিংবা অদূর ভবিষ্যতে অযথা সমস্যায় পড়তে হবে না।

লেখক: সাজিয়া তাবাসসুম, তথ্যসূত্র: চাকা বিডি ডটকম।

More News Of This Category