1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

ঋণের ফাঁদে পড়বে বাংলাদেশ!

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেশজ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে দেশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশনের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান এ আশঙ্কার কারণ হিসেবে বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থায়ন একটি সূত্রের (বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ) পরিবর্তে অন্য সূত্র থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

তবে দেশের আরেক অর্থনীতিবিদ, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর পদ্মা সেতুসহ বৃহৎ প্রকল্প ঘিরে অন্য শঙ্কার কথাও বললেন। তিনি বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ৪০ হাজার কোটি টাকার রেললাইন বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

এটা শেষ পর্যন্ত ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু এত টাকা খরচ করে কী লাভ (রেট অব রিটার্ন) পাওয়া যাবে, তা নিয়ে কোনো পর্যালোচনা হয়নি। কবে এত টাকা উঠে আসবে জানি না। পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও এ ধরনের পর্যালোচনা করা হয়নি।’ তাঁর মতে, বেশির ভাগ বড় প্রকল্প বিদেশি টাকায় করা হচ্ছে। এতে ঋণের সুদ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে তাদের নিয়মিত প্রতিবেদন ‘ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ প্রকাশ করেছে। এবার প্রতিষ্ঠানটি খানিকটা ভিন্নভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। দুজন অর্থনীতিবিদকে আলোচক হিসেবে রাখা হয়। তাঁরা বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান।

বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে এ সময় অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেছে, সামষ্টিক অর্থনীতিকে চার ধরনের চাপ আছে। এগুলো হলো খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন, বিদেশি অর্থায়নের ঘাটতি; তারল্য–সংকট এবং বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি। এ ছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে।

নির্বাচনের সময়ের অর্থনীতি: জাতীয় নির্বাচন অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে—এ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, সব দেশই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

আহসান এইচ মনসুর এ সময় আশঙ্কা করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হলে টাকা পাচার কমার কোনো কারণ থাকবে না, বরং বাড়তে পারে। তখন টাকা পাচার যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে অর্থনীতিতে সমস্যা আরও প্রকট হবে। সুশাসন প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে রাজনৈতিক সুশাসনের বিষয়টি আনতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, খেলাপি ঋণ কি শুধু অর্থনৈতিক ইস্যু, নাকি এর সঙ্গে রাজনৈতিক সুশাসনও জড়িত?

প্রবৃদ্ধি কেবল সংখ্যা নয়: আলোচনায় প্রবৃদ্ধি নিয়ে দুটি উদ্বেগের কথা বলেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কি না; প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে কি না। প্রবৃদ্ধির আলোচনায় ‘৭ শতাংশ’, ‘৮ শতাংশ’—এগুলোর কোনো মূল্য নেই। হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, বিশ্বমন্দা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে। এখন অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করা দরকার। কেননা এখনো ৩ কোটি ৯০ লাখ দরিদ্র লোক আছে।

এর মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ অতিদরিদ্র। প্রবৃদ্ধির সুফল কার কাছে যাচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। দৃশ্যমান বেকার না থাকলেও এ দেশের যুবকেরা উপযুক্ত কাজ পাচ্ছে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এমএ পাস করে পিয়নের কাজ করছে। এ ধরনের কাজ এখন অনেক যুবকের অবধারিত ভাগ্য হয়ে গেছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রবৃদ্ধির বিতর্ককে সংখ্যার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বিতর্ক হওয়া উচিত গুণগত মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি নিয়ে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমে রাজনৈতিক সুশাসনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান এ নিয়ে বলেন, ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো। কিন্তু এটি সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা না করে, মান দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রবৃদ্ধি নিয়ে বলেন, বিতর্ক হওয়া উচিত যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা মানসম্পত হচ্ছে কি না। সবাই এর সুফল পাচ্ছে কি না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, এ দেশে বলা সহজ, করা কঠিন। এখন যে উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলছে তাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো যেন বিলীন না হয়ে যায়।

অর্থনীতিবিদদের এসব আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে ঋণ ও সুদ পরিশোধের রেকর্ড খুব ভালো। বিদেশি ও দেশজ উৎস থেকে নেওয়া কোনো ঋণের অর্থ পরিশোধে বকেয়া পড়ে নেই। অর্থনীতির বর্তমান সক্ষমতা বিবেচনায় আগামী দু-তিন বছর ঋণের অর্থ পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

প্রবৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, এখন প্রবৃদ্ধি মান দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে কিছু আয়বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির সময় সব দেশেই বৈষম্য একটু বাড়ে। এটা কমাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও কর্মসংস্থানে বেশি নজর দেওয়া উচিত।

সুদের হার ও অন্যান্য: আলোচনায় অংশ নিয়ে বাস্তবতা বিবেচনা না করে শুধু ‘স্টেটমেন্ট’ দিয়ে সুদের হার নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এ কারণেই ‘নয়-ছয়’ সুদের হার কার্যকর হয়নি, হবেও না। সরকার হয়তো নির্বাচনের আগে এ অবস্থান থেকে সরে আসতে পারবে না, নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে সরে আসতে হবে।

রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ১২ শতাংশ এবং কর-জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশ দিয়ে কোনো দিনও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ বা উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া যাবে না। তাই তিনি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে বড় প্রকল্পে দেশজ উৎসের অর্থের অংশ বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। রিজার্ভের মজুত সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত বছর পর্যন্ত সাত মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ মজুত ছিল। এখন তা পাঁচ মাসে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে তা অচিরেই তিন মাসে নেমে আসবে। তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।

More News Of This Category