1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

আমদানী রপ্তানীর জন্য এলসি খুলবেন যেভাবে!

আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করতে চান…? অথচ জানেন না এলসি কিভাবে খুলতে হয়…

বর্তমান বিশ্বায়নের এ সময়ে প্রায় সব ধরনের ব্যাবসা বাণিজ্যই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ কাউকে চেনেন না। সেক্ষেত্রে বিক্রেতার একটু বাড়তি ঝুঁকি থেকেই যায়। এই ঝুঁকি এড়াতে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এলসি বা লেটার ওব ক্রেডিট চান। বিদেশ থেকে কোনো পণ্য আমদানি করতে চাইলে অবশ্যই ব্যাংকের মারফত এলসি খুলতে হয়। আন্তর্জাতিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে একমাত্র বৈধ মাধ্যম হল এলসি। এলসির মাধ্যমেই ব্যবসায়ীরা একদেশ থেকে অন্য দেশে পন্য আমদানি-রপ্তানি করে থাকে।

এলসি করতে আপনার যা যা প্রয়োজন হবে: ১. এলসি করার জন্য সর্বপ্রথম দরকার হবে আপনার ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স এবং এটি অবশ্যই আপটুডেট হতে হবে। ২. সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট। ৩. একটি গ্রহনযোগ্য আইআরসি (IRC-Import Registration Certificate) ৪. স্থানীয় বাণিজ্য চেম্বার বা সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের থেকে সদস্যপদ সার্টিফিকেট। ৫. আয়কর ছাড়পত্র বা নতুন কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য আয়কর ঘোষণা পত্র। ৬. মূসক নিবন্ধন সনদপত্র।

এলসির জন্য আবেদনের পূর্বে উল্লেখিত কাগজপত্র গুলো সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এছাড়াও আরও কিছু নথিপত্র দরকার হবে: ১. এলসি আবেদন ফর্ম ২. ইনডেন্ট / পারফর্মা ইনভয়েস (PI)/ ক্রয় আদেশ / ক্রয় চুক্তি ৩. যথাযথভাবে ও সঠিকভাবে কার্যকর চার্জ নথি ৪. যথাযথভাবে সিল ও স্বাক্ষরিত এলসি অনুমোদন ফরম (LCAF) ৫. বীমা সংক্রান্ত নোট

এসকল কাগজপত্র সংগ্রহ করার পর যে ব্যাংকে আপনি এলসি করতে ইচ্ছুক সেই ব্যাংকের নিকট কাগজপত্র গুলো দাখিল করতে হবে। তবে অবশ্যই সেই ব্যাংকে আপনার একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। ব্যাংক কাগজপত্র গুলো যাচাই বাছাই করে দেখতে কয়েকদিন সময় নিবে। এলসির সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকেই জানিয়ে দিবে।

ব্যাংকের সাথে আপনার এলসি বিষয়ক লেনদেন কেমন হবে,
প্রথম দিকে ব্যাংকে আপনার পুরো টাকাটাই জমা দিতে হবে। ধরুন আপনার এলসি ভ্যালু ৪০,০০০ ডলার। তাহলে ব্যাংকে আপনাকে ৩২ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। তবে আস্তে আস্তে ব্যাংকের সাথে আপনার ব্যবসা বাড়লে তখন ১০-২০% মার্জিন দিয়ে এলসি খুলতে পারবেন। ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার সাথে সাথে আপনাকে আরও কিছু ডকুমেন্ট দিতে হবে।

যেমন: আপনার কোম্পানীর সব কাগজ (ট্রেড লাইসেন্স, টিন, ভ্রাট, আইআরসি) ইনডেন্ট/পিআই এর ৩/৪ টি কপি। সাপ্লায়ার কোম্পানীর ব্যাংক ক্রেডিট রিপোর্ট ইন্সুরেন্স কভার নোট (যে কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে ইনডেন্ট দেখিয়ে ফি দিয়ে এটা নিতে হয়) এরপর ব্যাংক আপনাকে আপনার কাংখিত এলসির একটা কপি দেবে। আর অরিজিনালটা পাঠিয়ে দেবে বিদেশে সাপ্লাইয়ারের কাছে।

এলসির মাধ্যমে আপনার ব্যবসায়িক লেনদেন হবে যেভাবে, সকল ব্যাবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে দুটি পক্ষ থাকে একজন ক্রেতা আর একজন বিক্রেতা। এলসির মাধ্যমে আপনার লেনদেন প্রক্রিয়া কিভাবে সম্পন্ন হবে চলুন সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

১. ক্রেতা প্রথমে বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করবেন। ২. ক্রেতা যে ব্যাংকে এলসি করতে ইচ্ছুক সেই ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করবেন। ৩. ইস্যুকৃত এলসি ব্যাংক থেকে বিক্রেতার পরামর্শকারী ব্যাংকের নিকট পাঠাবেন। ৪. বিক্রেতার পরামর্শকারী ব্যাংক এলসির কাগজপত্র গুলো বিক্রেতার নিকট পাঠাবেন। ৫. কাগজপত্র গুলো দেখে বিক্রেতা শিপমেন্টের তারিখ ক্রেতাকে জানাবেন। এবং সাথে সাথে বিক্রেতা লেনদেনের সকল কাগজপত্র পরামর্শকারী ব্যাংককে দিবেন। ৬. পরামর্শকারী ব্যাংক কাগজপত্র গুলো ক্রেতা যে ব্যাংকে এলসি করেছেন সেই ব্যাংকে পাঠাবেন। ৭. কাগজপত্র গুলো পর্যালোচনা করে এলসি ইস্যুকৃত ব্যাংক লেনদেনের ছাড়পত্র পাঠাবেন পরামর্শ দানকারী ব্যাংকের নিকট পাঠাবেন। এবং সাথে সাথে একটি ছাড়পত্র ক্রেতার নিকট পাঠাবেন। পরামর্শ দানকারী ব্যাংকও একটি ছাড়পত্র বিক্রেতার নিকট পাঠাবেন। আর এ ছাড়পত্র পাওয়ার পর ক্রেতা-বিক্রেতা লেনদেনের জন্য প্রস্তুত।

এলসি’র পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আপনার করণীয় কাজ
ব্যাংকে অবশ্যই আপনার নিজস্ব কোম্পানীর একাউন্ট থাকতে হবে। পণ্য বা যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীর নিকট থেকে পি আই /প্রোফরমা ইনভয়েজ আনতে হবে। পি আই/প্রোফরমা ইনভয়েজ –এ পণ্য বা যন্ত্রাংশের মূল্য, পরিমাণ ও শর্তাবলী উল্লেখ থাকে। পি আই/প্রোফরমা ইনভয়েজ – এর কাগজ কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক / পরিচালক কর্তৃক স্বাক্ষর ও সীল প্রদান পূর্বক যে ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে সেখানে জমা দিতে হবে।

পি আই/প্রোফরমা ইনভয়েজ এর কাগজ পাওয়ার পর ব্যাংক থেকে ৬টা ফরম প্রদান করে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক / পরিচালক কর্তৃক স্বাক্ষর ও সীল প্রদান সাপেক্ষে ফরম ৬টি এবং এলসি মার্জিনের সর্বনিম্ন শতকরা ২০ ভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ অর্থ পরিশোধ করতে হয়।

নিজ দায়িত্বে অথবা ব্যাংকের সহায়তায় আমদানীকৃত পণ্য/যন্ত্রাংশের বীমা করতে হয়। বীমা ও ব্যাংকের কাগজপত্র সরবরাহকারীর নিকট পাঠালে সে পণ্য বা যন্ত্রাংশ সমুদ্র/সড়ক পথে প্রেরণ করে। স্থল/সমুদ্র বন্দরে পণ্য/যন্ত্রাংশ পৌঁছানোর পর এলসি–এর বাকী অর্থ ব্যাংকে পরিশোধ করতে হয়। এরপর ব্যাংক এন ও সি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করে। এই এন ও সি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোম্পানী মনোনীত সি এন্ড এফ এজেন্টের মাধ্যমে স্থল/সমুদ্র বন্দরের শুল্ক বিভাগে প্রদর্শন ও অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদন করে পণ্য বা যন্ত্রাংশ খালাস করতে হয়।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

More News Of This Category